
বাংলার মঙ্গলকাব্য মনসামঙ্গল-এর অন্যতম প্রধান চরিত্র বেহুলা। তিনি কেবল চাঁদ সওদাগরের পুত্র লখিন্দরের স্ত্রী নন, বরং অদম্য সাহস, ভালোবাসা ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বাংলার লোকসাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।
পরিবার ও শৈশব
লোককথা অনুযায়ী, বেহুলার জন্ম হয়েছিল বণিক সায় সওদাগর (অন্য নাম বাছোবানিয়া) ও তাঁর স্ত্রী সনকা দেবীর ঘরে। সমসাময়িক কালে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদ সওদাগরের পুত্র লখিন্দর। শৈশব থেকে একসাথে বেড়ে ওঠার ফলে লখিন্দর ও বেহুলাকে একে অপরের উপযুক্ত সঙ্গী বলে ধরা হতো।
বিবাহ ও বিয়োগান্তক কাহিনি
চাঁদ সওদাগর ছিলেন শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত। মনসাদেবীর পূজা প্রত্যাখ্যান করার ফলে মনসা ক্রুদ্ধ হন এবং লখিন্দরের জীবনে অমঙ্গল নেমে আসে। বিবাহের পর বেহুলা ও লখিন্দরের বাসরঘরে প্রবেশ করতেই সাপের দংশনে লখিন্দরের মৃত্যু ঘটে। তবে বেহুলা অদম্য সাহস দেখিয়ে মৃত স্বামীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন এবং দেবলোক পর্যন্ত পৌঁছে স্বামীর জীবন ফেরানোর জন্য সংগ্রাম করেন। এই কিংবদন্তি তাকে বাংলার ইতিহাসে এক অনন্য নায়িকার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
বেহুলার বাসরঘর – প্রত্নতাত্ত্বিক ও লোককথার মিলন
বেহুলার বাসরঘর আজও বগুড়া জেলার সুলতানগঞ্জ (গোকুল) গ্রামে অবস্থিত। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে এই স্থানটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ, তবে লোকমুখে এটি “বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর” নামে পরিচিত। মহাস্থানগড়ের নিকটে অবস্থিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইতিহাস, পুরাণ ও লোককাহিনির এক অসাধারণ সংমিশ্রণ।
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
বেহুলা শুধু একটি কাব্যের চরিত্র নন—তিনি বাংলার লোকসাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের এক অমূল্য সম্পদ। তার কাহিনি সাহস, ত্যাগ ও ভক্তির প্রতীক হয়ে আজও মানুষের হৃদয়ে অম্লান।



