
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত মঙ্গলকাব্য মনসামঙ্গল, প্রাচীন অসমীয়া মনসা কাব্য এবং শিবপুরাণে উল্লেখিত এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন লক্ষ্মীন্দর (Lakshindar)। তিনি ছিলেন চাঁদ সওদাগরের কনিষ্ঠ পুত্র এবং বেহুলার স্বামী। তার কাহিনি বেদনা, অভিশাপ ও ভালোবাসার সাথে গভীরভাবে জড়িত।
পারিবারিক পরিচয়
লক্ষ্মীন্দর এর পিতা ছিলেন প্রাচীন ভারতের চম্পক নগরীর ধনী ও প্রভাবশালী বণিক চাঁদ সওদাগর। তার জননী ছিলেন সনকা, যিনি মনসামঙ্গলের অন্যতম প্রধান চরিত্র।
মনসার অভিশাপ ও করুণ পরিণতি
চাঁদ সওদাগর মনসা দেবীর পূজা প্রত্যাখ্যান করায় তিনি অভিশপ্ত হন। এর ফলে সর্পদংশনে একে একে চাঁদ সওদাগরের সব পুত্র মারা যায়, কেবল লখিন্দর ছাড়া। তাই লখিন্দরের বিবাহের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে দেবতা বিশ্বকর্মা এমন এক বাসরঘর নির্মাণ করেন, যেখানে সাপের প্রবেশ প্রায় অসম্ভব ছিল।
কিন্তু সকল সাবধানতার পরও মনসার প্রেরিত কালনাগ বাসরঘরে প্রবেশ করে লখিন্দরকে দংশন করে। এর ফলে বিবাহের রাতেই লখিন্দরের মৃত্যু ঘটে।
বেহুলার সংগ্রাম
এই করুণ ঘটনাই সৃষ্টি করে বাঙালি লোকসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেমকাহিনি—বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের উপাখ্যান। স্বামীকে হারানোর পরও বেহুলা হাল ছাড়েননি; মৃত স্বামীকে নিয়ে তিনি দেবলোক পর্যন্ত গমন করেন। অবশেষে তার ভক্তি, ধৈর্য ও সাহসের কাছে মনসা দেবী নতি স্বীকার করেন এবং লখিন্দরের প্রাণ ফিরে আসে।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
লক্ষ্মীন্দরের মৃত্যু ও বেহুলার সংগ্রাম কেবল একটি লোককথা নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্য, বিশ্বাস এবং অটুট ভালোবাসার প্রতীক। মনসামঙ্গল কাব্যের এই কাহিনি আজও সাহিত্য, সংগীত, নাটক ও সংস্কৃতিতে অমর হয়ে আছে।



