বৈরাগীর ভিটা,বৈরাগীর ভিটা রহস্যে ঘেরা প্রাচীন স্থাপনা,বৈরাগীর ভিটা মহাস্থানগড়ের,হাজার বছরের পুরনো বৈরাগীর ভিটা,মহাস্থানগড়,বগুড়া

বৈরাগীর ভিটা – বগুড়ার প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী

বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের দক্ষিণ প্রান্তে, করতোয়া নদীর বাঁকে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হলো বৈরাগীর ভিটা। এটি কেবল উত্তরবঙ্গের নয়, সমগ্র বাংলার ইতিহাসের এক গৌরবময় নিদর্শন।

বৈরাগীর ভিটা এর নামের উৎস

জনশ্রুতি রয়েছে, এ স্থানটি একসময় রাজবাড়ি ছিল। ধারণা করা হয়, রাজা এখানে সাধু, ঋষি বা বৈরাগীদের সেবা করতেন। সেই থেকেই স্থানটির নামকরণ হয়েছে বৈরাগীর ভিটা

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

১৯২৮-২৯ সালে প্রথম খননের মাধ্যমে এখানে দুটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীতে, ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে পুনরায় খনন শুরু হয়, যা আজও চলমান।

খননকাজে যে তথ্য উঠে এসেছে—

  • প্রাথমিক পাল যুগের মন্দির: উত্তর দিকে দৈর্ঘ্য ২৯.৮৭ মিটার ও পূর্ব দিকে ১২.৮ মিটার ভিত্তি প্রাচীর পাওয়া যায়। এই প্রাচীর মোল্ডেড ব্যান্ড দ্বারা শোভিত ছিল।
  • শেষ পাল যুগের মন্দির: আয়তনে আরও বৃহৎ (৩৩.৮৩ মি × ১৩.৩৭ মি), তবে ধ্বংসাবশেষ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এর পূর্ণ স্থাপত্যরূপ স্পষ্ট নয়।
  • মন্দিরগুলোর মাঝে একটি নালা প্রবাহিত ছিল, যার একাংশ ইটের আরেকাংশ কালো কষ্টি পাথরে নির্মিত।
  • পূর্বদিকে একটি মঞ্চে ২৩টি কামরার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
  • ২০১৪ সালের খননে আবিষ্কৃত হয় প্রায় ২১০০ বছর আগের তিনটি পাতকুয়া

আবিষ্কৃত নিদর্শন

খননকাজে পাওয়া গেছে নানান ঐতিহাসিক বস্তু, যেমন—

  • মাছ ধরার জালের জন্য ব্যবহৃত পোড়া মাটির বল
  • ভাঙা মাটির পাত্র ও বদনা
  • গৃহস্থালীর সামগ্রী
  • ফুল আঁকা অলঙ্কৃত ইট
  • পিরামিড আকৃতির নকশা করা ইট

এসব নিদর্শন প্রমাণ করে, বৈরাগীর ভিটা শুধু ধর্মীয় কেন্দ্রই নয়, বরং সমৃদ্ধ জনবসতিরও নিদর্শন বহন করে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

পাল যুগের পাশাপাশি গুপ্ত যুগের স্থাপত্যের চিহ্নও এখানে পাওয়া গেছে। ফলে এ স্থানটি বাংলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ইতিহাসের এক অমূল্য ভাণ্ডার।

বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে থাকা বৈরাগীর ভিটা বর্তমানে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রতিটি ইট, মন্দির ও নিদর্শন আজও আমাদের অতীতের সঙ্গে যোগসূত্র রচনা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *