
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুকে বয়ে চলেছে ঐতিহাসিক ছোট যমুনা নদী। প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর প্রস্থ ফুলবাড়ী এলাকায় গড়ে ১০৫ মিটার এবং গভীরতা ৬ মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন প্রায় ১৬০ বর্গকিলোমিটার।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নথিতে এটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৪৬ হিসেবে তালিকাভুক্ত।
নামকরণের কারণ
‘ছোট যমুনা’ নামটি এসেছে দুটি কারণে —
- এটি ভারতের পবিত্র যমুনা নদীর তুলনায় ছোট আকারের হওয়ায় এর নামের শুরুতে “ছোট” শব্দটি যুক্ত হয়েছে।
- বাংলাদেশের মূল যমুনা নদী থেকে আলাদা করে পরিচিতি দেওয়ার জন্যও এই নাম ব্যবহৃত হয়।
উৎপত্তি ও প্রবাহপথ
ছোট যমুনা নদীর উৎপত্তি হয়েছে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বড় চণ্ডীপুর বিল থেকে। সেখান থেকে এটি পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, হাকিমপুর ও বিরামপুর উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে চৌঘরিয়া সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার আপ্তাই ও উজল অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীটি আবার বাংলাদেশের পাঁচবিবি উপজেলায় প্রবেশ করে। এরপর দক্ষিণে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অবশেষে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় আত্রাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
নদীর তীরে গড়ে ওঠা শহর
ছোট যমুনা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও পৌরসভা —
ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট ও নওগাঁ।
এ নদী একসময় এসব অঞ্চলের বাণিজ্য, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাণ ছিল।
নদীর ইতিহাস ও উৎস
বিশ্বাস করা হয়, ছোট যমুনা নদী মূলত তিস্তা নদীর একটি প্রাচীন শাখা, যা একসময় দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়ি অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হয়ে রাজশাহীর উত্তরে আত্রাই নদীতে মিলিত হয়েছিল।
অন্য এক সূত্রে বলা হয়, এটি ইছামতী নদীর একটি শাখা, যা ছাতিয়ানগড় বিল থেকে উৎপন্ন হয়ে বিন্যাকুড়ি বাজারে এসে দুই ভাগে বিভক্ত হয়—একটি “ছোট যমুনা” ও অন্যটি “মরা ইছামতী” নামে পরিচিত।
মিলনস্থল
ছোট যমুনা নদীর গন্তব্য রাজশাহীর উত্তর-পূর্বে, যেখানে এটি আত্রাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।
অন্যদিকে, এর একটি শাখা ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর অঞ্চলেও প্রবাহিত হয়ে সেখানে আত্রাই নদীতেই মিলেছে।
বর্তমান অবস্থা
এক সময় প্রবল খরস্রোতা এই নদী আজ মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। বর্ষাকালে কিছুটা পানি প্রবাহ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর তলদেশ প্রায় শুকিয়ে যায়।
মানুষের দখল, পলি জমে যাওয়া ও পানিপ্রবাহের পরিবর্তনের কারণে নদীটি আজ হারাতে বসেছে তার প্রাচীন ঐতিহ্য।
অর্থাৎ, আকারে ছোট হলেও ইতিহাস ও ভৌগোলিক গুরুত্বে ছোট যমুনা নদী উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।



