চাঁপাইনবাবগঞ্জ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা,চাঁপাইনবাবগঞ্জ দর্শনীয় স্থান,চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর সংস্কৃতি,চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর বিখ্যাত খাবার,চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর ইতিহাস,চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভ্রমণ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইতিহাস,

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিচিতি ও ইতিহাস

পরিচিতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা। এই অঞ্চলকে অনেকে ‘আমের দেশ’ বা ‘আমের রাজধানী’ বলেও চেনে। দেশের মোট উৎপাদিত আমের একটি বড় অংশ এই জেলাতেই উৎপাদিত হয়।

ব্রিটিশ ভারতের সময় এটি ছিল মালদহ জেলার অংশ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এটি পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার একটি মহকুমা হয় এবং ১৯৮৪ সালে পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

অবস্থান ও সীমানা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাংলাদেশের মানচিত্রের একেবারে পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত।

অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ:

২৪°২২’ থেকে ২৪°৫৭’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭°২০’ থেকে ৮৮°২৩’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।

সীমানা:

  • উত্তরে: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ জেলা
  • দক্ষিণে: পদ্মা নদী ও ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলা
  • পূর্বে: রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা ও নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলা
  • পশ্চিমে: ভারতের মালদহ জেলা ও পদ্মা নদী

নামকরণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামটি এসেছে দুটি শব্দ থেকে — ‘চাঁপাই’‘নবাবগঞ্জ’। পূর্বে এই অঞ্চলটি নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি হওয়ায় ‘নবাব’ শব্দটি যুক্ত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • পূর্বের নাম: নবাবগঞ্জ
  • বর্তমান নাম: চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • নাম পরিবর্তনের তারিখ: ১ আগস্ট ২০০১
  • নামকরণের কারণ: ‘চাঁপাই’ ও ‘নবাবগঞ্জ’ শব্দ দুটি একত্রিত করা হয়।

আয়তন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট আয়তন ১,৭০২.৫৬ বর্গকিলোমিটার।

যে কারণে বিখ্যাত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মূলত আম, খেজুর ও কলাইয়ের জন্য বিখ্যাত।

প্রধান বিখ্যাত পণ্যসমূহ:

  • আম: শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রচুর আম উৎপন্ন হয়।
  • খেজুর: এখানকার খেজুর গুড় ও খেজুরের পায়েস বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
  • কলাই: কলাই রুটি ও কলাই ডাল এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার।
  • ঐতিহ্যবাহী খাবার: ছোট মাছের সঙ্গে আমচুর ও কুমড়ো বড়ি দিয়ে রান্না করা ইলিশ এখানকার বিশেষ খাবার।

বিখ্যাত খাবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সবচেয়ে পরিচিত খাবার হলো কালাই রুটি।

কালাই রুটির বিবরণ:

  • উপকরণ: মাষকলাই ডালের আটা, আতপ চালের ময়দা, লবণ ও পানি।
  • বৈশিষ্ট্য: এটি সংরক্ষণযোগ্য, পুষ্টিকর ও ঐতিহ্যবাহী খাবার।

উৎপত্তি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব ঐতিহ্যের অংশ।

প্রশাসনিক বিভাগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মোট ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিতঃ

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা
  • গোমস্তাপুর উপজেলা
  • নাচোল উপজেলা
  • ভোলাহাট উপজেলা
  • শিবগঞ্জ উপজেলা

জনসংখ্যা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট জনসংখ্যা ১৮,৩৫,৫২৮ জন।

  • পুরুষ: ৮,৮৭,১৭০ জন
  • মহিলা: ৯,৪৮,৩৫৮ জন

শিক্ষা ব্যবস্থা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিক্ষা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে উন্নত।

প্রধান পরিসংখ্যান:

  • সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৩৭০টি।
  • বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ২৮২টি।
  • সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়: ৪টি।
  • বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়: ২০৪টি।
  • সরকারি কলেজ: ৭টি।
  • বেসরকারি কলেজ: ৪৮টি।
  • মাদ্রাসা: ১২৮টি।
  • কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: ২টি (সরকারি ও বেসরকারি)।
  • বিশ্ববিদ্যালয়: ১টি (এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ)।
  • PTI (Primary Training Institute): ২টি।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ:


  • হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
  • নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ।
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ।
  • শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল।
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
  • নাচোল সরকারি কলেজ।
  • বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজ।
  • আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজ।
  • এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইত্যাদি।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি জেলা।

প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো:

  • ছোট সোনা মসজিদ।
  • তোহাখানা।
  • শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) এর মাজার।
  • ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা।
  • দারাসবাড়ি মসজিদ।
  • ধানিয়াচক মসজিদ।
  • নাচোল রাজবাড়ী।
  • স্বপ্নপল্লী ও স্বপ্ন পল্লী পার্ক।
  • টাংঘন পিকনিক পার্ক।
  • কানসাট জমিদার বাড়ি।
  • গোপালপুর ইকো পার্ক ও পাখি পল্লী।
  • মহানন্দা নদী।
  • ছোট সোনা মসজিদ পার্ক।
  • বাবুডাইং।
  • নওদা বুরুজ।
  • চামচিকা মসজিদ।
  • নীলকুঠি।
  • শুড়লার তেঁতুল গাছ।
  • গোয়াইন বাঁধ।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বেশ কিছু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।

সরকারি হাসপাতালসমূহ:

  • ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
  • সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
  • গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
  • নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
  • ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
  • শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ:

  • মিডল্যান্ড হাসপাতাল।
  • নাভানা হাসপাতাল।
  • বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি ক্লিনিক।

অর্থনীতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর।
এ জেলার প্রধান অর্থনৈতিক ফসল হলো আম। শিবগঞ্জ উপজেলা এই ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু। মৌসুমে হাজার হাজার আম ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করেন, ফলে অঞ্চলটি প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে।

অর্থনীতির প্রধান দিকসমূহ:

  • প্রধান ব্যবসা: আম বাণিজ্য।
  • অন্য পণ্য: টমেটো, পান, কাঁসা-পিতল সামগ্রী।
  • বিশেষ অঞ্চল: সদর উপজেলার যাদুপুর গ্রামের পান বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

উপসংহার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের “আমের রাজধানী” হিসেবে সমাদৃত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এই জেলা বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

FAQ

১. চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কোথায় অবস্থিত?

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাংলাদেশে রাজশাহী বিভাগের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত, যার পশ্চিমে ভারতের মালদহ জেলা এবং দক্ষিণে পদ্মা নদী।

২. চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নামের উৎস কী?

চাঁপাই’ ও ‘নবাবগঞ্জ’ শব্দ দুটি একত্রিত করে জেলার নামকরণ করা হয়েছে। ২০০১ সালের ১ আগস্ট সরকারি ভাবে নাম পরিবর্তন হয়।

৩. চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কেন বিখ্যাত?

এই জেলা “আমের রাজধানী” নামে পরিচিত। এখানকার শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুরে উৎপাদিত আম দেশের সবচেয়ে সুস্বাদু।

৪. চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খাবার কী?

কালাই রুটি, কলাই ডাল ও খেজুর গুড় এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার। এছাড়া ছোট মাছ ও আমচুর দিয়ে তৈরি খাবারও জনপ্রিয়।

৫. চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো কী কী?

ছোট সোনা মসজিদ, তোহাখানা, শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) এর মাজার, ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা ও নাচোল রাজবাড়ী প্রধান দর্শনীয় স্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *