জগৎরাম রায় | বর্ধমানের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়

জগৎরাম রায় ছিলেন অষ্টাদশ শতকের একজন খ্যাতিমান কবি, সাধক ও জমিদার। তাঁর জীবন যেমন সাহিত্যসেবায় উজ্জ্বল, তেমনি বর্ধমান রাজবংশের ইতিহাসেও তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ নাম।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়

জগৎরাম রায়ের সঠিক জন্মতারিখ পাওয়া যায় না। তিনি ছিলেন বর্ধমান রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার কৃষ্ণরাম রায়ের পুত্র। পারিবারিকভাবে তিনি ছিলেন সাহসী ও বিদ্যানুরাগী।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

কৃষ্ণরাম রায়ের মৃত্যুর পর এক ষড়যন্ত্রকারীর আক্রমণে বর্ধমান রাজ্যে বিপর্যয় নেমে আসে।

  • শোভারামের আক্রমণ: শোভারাম নামক এক ব্যক্তি কৃষ্ণরাম রায়কে হত্যা করে রাজ্য দখল করতে চায়।
  • ঢাকায় আশ্রয়: পিতার মৃত্যুর পর জগৎরাম রায় বাধ্য হয়ে ঢাকায় পালিয়ে যান।

জমিদারি পুনরুদ্ধার ও শাসন

মোঘল সুবেদার আজিম-উস-শানের সহায়তায় জগৎরাম রায় পুনরায় বর্ধমান রাজ্যের জমিদারি ফিরে পান।

  • শাসনের সময়কাল: ১৬৯৯ থেকে ১৭০২ সাল
  • তিনি শুধু রাজ্য পুনরুদ্ধারই করেননি, পারিবারিক সম্পত্তি আরও সম্প্রসারিত করেছিলেন।
  • মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁর বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ফরমান দিয়ে সম্মানিত করেন।

সাহিত্যিক অবদান

শাসক হলেও জগৎরাম_রায় ছিলেন একজন কবি ও সাধক

  • তাঁর রচিত রামায়ণ কাব্য বাংলা ভক্তিমূলক সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
  • ভাষা সবসময় প্রাঞ্জল না হলেও তাঁর ভক্তি ও সাহিত্যপ্রেম তাঁকে অমর করে রেখেছে।

শেষ অধ্যায়

  • ১৭০২ সালে বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে জগৎরাম রায় নিহত হন।
  • তাঁর দুই পুত্র ছিলেন কীর্তিচাঁদ রায়মিত্রসেন রায়
  • পরবর্তীতে কীর্তিচাঁদ রায় বর্ধমান রাজ্যের জমিদার হয়ে ১৭০২ থেকে ১৭৪০ সাল পর্যন্ত শাসন করেন এবং রাজ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেন।

সংক্ষিপ্ত সারাংশ

জগৎরাম রায় শুধু একজন জমিদার ছিলেন না; তিনি ছিলেন এক সাহসী যোদ্ধা, কবি ও সাধক, যিনি প্রতিকূলতার মধ্যেও পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা করে বাংলা সাহিত্যে অমর অবদান রেখে গেছেন। তাঁর সাহস, ভক্তি ও সাহিত্যচর্চা আজও বর্ধমানের ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *